পার্ট - ৯ || সূরাঃ আল বাকারা
✅তারা যখন জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুখি হল, তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর সবরের গুণ ঢেলে দাও এবং আমাদেরকে অবিচল-পদ রাখ, আর কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান কর।
—আল বাকারা - ২৫০
✅ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।
—আল বাকারা - ২৫১
✅এই সকল আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার নিকট এটা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করছি, আর নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।
—আল বাকারা - ২৫২
✅এই যে রাসূলগণ, যাদেরকে আল্লাহ মানুষের ইসলামের জন্য পাঠিয়েছেন, তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে, যার সঙ্গে আল্লাহ কথা বলছেন এবং তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে আল্লাহ বহু উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। আর আল্লাহ মারয়ামের পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দিয়েছেন ও রূহুল-কুদসের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছেন। আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তাদের পরবর্তীকালের মানুষ তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী এসে যাওয়ার পর আত্মকলহে লিপ্ত হতে দিতেন না। কিন্তু তারা মতবিরোধে লিপ্ত হল। তাদের মধ্যে কিছু তো এমন, যারা ঈমান এনেছে এবং কিছু এমন, যারা কুফরী অবলম্বন করেছে। আল্লাহ চাইলে তারা আত্মকলহে লিপ্ত হত না। কিন্তু আল্লাহ সেটাই করেন যা তিনি চান।
—আল বাকারা - ২৫৩
✅হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছেন তা থেকে সেই দিন আসার আগেই আল্লাহর পথে ব্যয় কর, যেদিন কোনও ক্রয় বিক্রয় বা বেচাকেনা থাকবে না, কোনও বন্ধুত্ব কাজে আসবে না এবং কোনও সুপারিশও না। আর যারা কুফরী অবলম্বন করেছে, তারাই জালিম।
—আল বাকারা - ২৫৪
✅আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
—আল বাকারা - ২৫৫
✅সূরা আল বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, রাসূলে করীম (সাঃ) একে সবচেয়ে উত্তম আয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উবাই ইবনে কা'ব (রাজিঃ) কে জিজ্ঞাস করেছিলেন, কোরআনের মধ্যে কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ন? উবাই ইবনে কা'ব (রাজিঃ) আরজ করলেন, তা হল আয়াতুল কুরসী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা সমর্থন করে বলেন, হে আবুল মানযার! তোমাকে তোমার উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পাঠ করে তাঁর জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কোন বাঁধা থাকে না। অর্থাৎ মৃত্যুর পরপরই সে জান্নাতের ফলাফল এবং আরাম-আয়েশ ভোগ করতে আরম্ভ করবে।
✅দীনের বিষয়ে কোনও জবরদস্তি নেই। হিদায়াতের পথ ভ্রান্ত পথ
থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এর পর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল, যা ভেঙ্গে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন।
—আল বাকারা - ২৫৬
✅সূরা আল বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জাহিলিয়াতের যুগে বন্ধ্যা নারীরা এরূপ মানত করত, "যদি আমার কোন পুত্র সন্তান জন্মে, তবে তাকে ইহুদী বানিয়ে দিব।" বনি নজীবের ইহুদীদেরকে যখন দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়, তখন আনছার মুসলমানদের কতিপয় ছেলে-যারা উক্ত বানিয়ে দিব।" বনি নজীবের ইহুদীদেরকে যখন দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়, তখন আনছার মুসলমান বানিয়ে রেখে দেবার জন্য প্রতিজ্ঞা করল। তখনই এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি নাজিল হয়। অন্য বর্ণনা মতে, হযরত হোসাইন আনসারীর দুইপুত্র ছিল খ্রিষ্টান; কিন্তু তিনি ছিলেন মুসলমান। পুত্রদ্বয়কে জোরপূর্বক মুসলমান বানিয়ে নিয়ে যেতে পারি কি না, এই মর্মে তিনি হুযুর (সাঃ)-এর নিকট জানতে চাইলে তখনই এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি নাযিল হয়।
✅আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তাদের অভিভাবক শয়তান, যারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা সকলে অগ্নিবাসী। তারা সর্বদা তাতেই থাকবে।
—আল বাকারা - ২৫৭
✅তুমি কি সেই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করেছে, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়, যখন ইবরাহীম বলল, আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যুও! তখন সে বলতে লাগল, আমিও জীবন দিই এবং মৃত্যু ঘটাই! ইবরাহীম বলল, আচ্ছা! তা আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত কর তো! এই কথায় সে কাফির নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালিমদেরকে হিদায়াত দান করেন না।
—আল বাকারা - ২৫৮
✅সূরা আল বাকারার ২৫৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী,হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও নমরুদের পারস্পারিক বিতর্কের যে ঘটনা ঘটেছিল এখানে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে। নমরুদকে ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, আমার রব জীবন ও মৃত্যুর মালিক। উত্তরে নমরুদ দুজন হাজতীকে ডেকে এনে একজনকে হত্যা করল এবং অপরজনকে মুক্তি দিয়ে বলল, দেখ আমিও তা করতে পারি। ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের স্থল দেখে তাঁর উপযোগী একটি প্রমান পেশ করলেন। বললেন, আমার রব পূর্ব দিকে সূর্য উদিত করেন তুমি পশ্চিম দিকে সূর্যকে উদিত করে দেখাও। নমরূদ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। অবশ্য সে পাল্টা জিজ্ঞাসা করতে পারত যে, তোমর রবকেই বরং পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত করে দেখাতে বল। কিন্তু সে তা এজন্য বলে নি যে, জবাবে যদি ইব্রাহীম (আঃ) তাই করে দেখাতেন, তবে নমরুদের সমস্ত গোমর ফাঁস হয়ে যেত।
✅তুমি কি সেই রকম ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে চিন্তা করেছে, যে একটি জনপদের উপর দিয়ে এমন এক সময় গমন করছিল, যখন তার ছাদ উল্টো থুবড়ে পড়ে রয়েছিল। সে বলেছিল, আল্লাহ এই জনপদকে মৃত্যুর পর কিভাবে জীবিত করবেন? তারপর আল্লাহ তাকে একশ’ বছরের জন্য মৃত্যু দান করলেন এবং তারপর তাকে জীবিত করলেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কত কাল যাবৎ এই অবস্থায় থেকেছে? সে বলল, এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ! আল্লাহ বললেন, না, বরং তুমি এই ভাবে একশ’ বছর থেকেছে। এবার নিজ পানাহার সামগ্রীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখ তা একটুও পচেনি। আবার অন্যদিকে নিজ গাধাটিকে দেখ, পচে গলে তার কী অবস্থা হয়েছে। আমি এটা করেছি এজন্য যে, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নিজ কুদরতের একটি নিদর্শন বানাতে চাই এবং এবার নিজ গাধার অস্থিসমূহ দেখ, আমি কিভাবে সেগুলোকে উত্থিত করি এবং তাতে গোশতের পোশাক পরাই। সুতরাং যখন সত্য তার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে গেল, তখন সে বলে উঠল, আমার বিশ্বাস আছে আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন।
—আল বাকারা - ২৫৯
✅যখন ইবরাহীম (আঃ) বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কিভাবে জীবিত করবেন আমাকে তা দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করছ না? ইবরাহীম (আঃ) বলল, বিশ্বাস কেন করব না? কিন্তু এই আগ্রহ প্রকাশ করেছি এই জন্য যে, যাতে আমার অন্তর পরিপূর্ণ প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ বললেন, আচ্ছা, চারটি পাখি ধর এবং সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর সেগুলোকে যবাহ করে তার একেক অংশ একেক পাহাড়ে রেখে দাও। তারপর তাদেরকে ডাক দাও। সবগুলো তোমার কাছে ছুটে চলে আসবে। আর জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা মহাক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়।
—আল বাকারা - ২৬০
✅যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজ অর্থ সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
—আল বাকারা - ২৬১
✅সূরা আল বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, যারা আল্লাহ্র পথে খরচ করে তাদের উপমা এমন যেমন কেউ গমের একটি দানা উর্বর ভূমিতে বপন করল। ঐ দান হতে একটি চারাগাছ গজাল। যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। অর্থাৎ একটি দানা হতে সাতশ দানা জন্মিল। তবে স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, উক্ত ব্যয় হতে কাঙ্খিত ফল লাভ করতে হলে নিম্নের শর্ত সমূহ পূর্ন করতে হবে। (১) সম্পদ হালাল হতে হবে। (২) যে দান করবে তাঁর উদ্দেশ্য সৎ হতে হবে। (৩) খরচের খাত যোগ্য হতে হবে। (৪) দান করার পর অনুগ্রহ করেছে এমন ধারণা পোষণ করতে পারবে না। এবং (৫) গ্রহীতাকে ঘৃণা করা যাবে না। উল্লেখিত শর্তাবলী পুরণে ব্যর্থ হলে দানের সুফল আশা করা যায় না।
✅যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না, অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না, তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কোনরূপ কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের সওয়াব পাবে। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখীও হবে না।
—আল বাকার - ৬২
✅নম্র কথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ সব দান খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যে দান খয়রাত করার পর খোঁটা দেওয়া হয়, দান ক খয়রাত করার পর অনুগ্রহের কথা বলা হয়, দান খয়রাত করার পর সেই কথা বলে বেড়ানো হয়, দান খয়রাত করার পরে কষ্ট দেওয়া হয়। মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তা’আলা অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।।
সূরাঃ আল বাকারা - ২৬৩
✅সূরা আল বাকারার ২৬৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, আর্থিক অক্ষমতা ও ওযরের সময় যাঞ্ছাকারীর জবাবে কোন সঙ্গত কারণ বলে দেওয়া এবং যাঞ্ছাকারী খারাপ আচরন করলে বা রাগান্বিত হলে তাকে মাপ করা সেই দানকারীর চেয়ে উত্তম যে গ্রহীতাকে দানের পর কষ্ট দেয়। আল্লাহ্ তা’য়ালা সম্পদশালী ও ধৈর্যশীল। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি ব্যয় করে সে স্বীয় উপকারের জন্যই সে ব্যয় করছে। দান প্রহীতার নিকট থেকে কোনরূপ অকৃতজ্ঞতা বুঝা গেলেও তাকে আল্লাহ্র রীতির অনুসারী হয়ে মাফ করা প্রয়োজন।
✅হে মুমিনগণ! খোটা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে, অনুগ্রহের কথা বলে, দান খয়রাত করে সেই কথা মানুষের কাছে প্রচার করে নিজেদের দান খয়রাতকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এই রকম যেমন এক মসৃণ পাথরের উপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফিরদেরকে হিদায়াত উপনীত করেন না।
—আল বাকারা - ২৬৪
✅যারা আল্লাহর রাস্তায় অর্থ ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।
—আল বাকারা - ২৬৫
✅তোমাদের মধ্যে কেউ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙুরের একটি বাগান থাকবে যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে এবং যাতে সর্বপ্রকার ফলমূল থাকবে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হবে এবং তার সন্তান-সন্ততি দুর্বল হবে, এরপর তার ওপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আসবে? এইভাবে আল্লাহ্ তাঁর নিদর্শন তোমাদের জন্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাতে তোমরা চিন্তা ভাবনা করতে পার।
—আল বাকারা - ২৬৬
✅হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় কর। আর এরূপ মন্দ জিনিস আল্লাহর নামে দেওয়ার নিয়ত করো না, যা অন্য কেউ তোমাদেরকে দিলে তোমার খারাপ লাগবে। জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
—আল বাকারা - ২৬৭
✅সূরা আল বাকারার ২৬৭ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী,
পূর্বের আয়াত সমূহে দান-খয়রাত কবূল হওয়ার জন্য শর্ত জানা যায়। (১) সম্পদ হালাল হওয়া, (২) সুন্নাহ অনুযায়ী ব্যয় করা, (৩) ছহীহ্ খাতে ব্যয় করা, (৪) দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ না করা (৫) গ্রহীতাকে হেয়-প্রতিপন্ন না করা এবং অন্য কোনভাবে কষ্ট না দেয়া ও (৬) বিশুদ্ধ নিয়তে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য দান করা।
✅শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
—আল বাকারা - ২৬৮
✅সূরা আল বাকারার ২৬৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, যখন কারও মনে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে, দান খয়রাত করলে গরীব হয়ে যাবে, তখন বুঝতে হবে যে, এই চিন্তা ভাবনা গুলো শয়তানের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যার মনে এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে, দান-খয়রাতে গুনাহ মাফ হবে এবং ধন-সম্পদও বেড়ে যাবে এবং বরকত হবে, তখন মনে করতে হবে এটী আল্লাহর পক্ষ হতে।
✅আল্লাহ যাকে চান জ্ঞান দান করেন, আর যাকে জ্ঞান দান করা হয়, তার বিপুল পরিমাণে কল্যাণ লাভ হয়। উপদেশ তো কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানীবান।
—আল বাকারা - ২৬৯
✅তোমরা যা কিছু দান খয়রাত করে বা ব্যয় করে কিংবা মানত করে, আল্লাহ তা জানেন। আর পক্ষান্তরে জালিমগণ বা অন্যায়কারীগণ কোনও রকমের সাহায্য পাবে না।
—আল বাকারা - ২৭০
✅যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান খয়রাত গোপনে কর অভাবগ্রস্তদেরকে, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।
—আল বাকারা - ২৭১
✅হে নবী! তাদেরকে অর্থাৎ কাফিরদেরকে সঠিক পথে আনয়ন করা আপনার দায়িত্ব নয়। কিন্তু আল্লাহ যাকে চান সঠিক পথে আনয়ন করেন। তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের হয়ে থাকে, আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় করে না। আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।
—আল বাকারা - ২৭২
✅সূরা আল বাকারার ২৭২ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, হযরত আবু বকর (রাজিঃ)-এর সাথে বিনতে ওমাইজা যখন পরিনয় সূত্রে আবদ্ধ হন তখন তাঁর মা ও দাদী যারা তখনও মুশরিক ছিলেন, তাঁরা হযরত আবূ বকর (রাজিঃ)-এর নিকট হতে কিছু দানস্বরুপ ভাতার প্রার্থী হলেনর সাথে শরীক সাব্যস্তকারীদেরকে কিছু দিতে অস্বীকার করলেন। তখনই এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি নাজিল হয়; অর্থাৎ অভাবীদেরকে সাহায্য করা যে কোন অবস্থায় হোক না কেন সেটা ছয়াবেরই কাজ হবে, সে যেই ধর্মেই হোক না কেন।
✅আর্থিক বা দান খয়রাতের সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত সেই সকল গরীব, যারা নিজেদেরকে আল্লাহর পথে এমন ভাবে আবদ্ধ করে রেখেছে যে, অর্থের সন্ধানে বা জীবিকার সন্ধানে তারা ভূমিতে চলাফেরা করতে পারে না। তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে কাকুতি মিনতি বা ভিক্ষা চায় না, তাই অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা চিনতে পারবে। তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন।
—আল বাকারা - ২৭৩
✅সূরা আল বাকারার ২৭৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, অর্থের সন্ধানে বা জীবিকার সন্ধানে তারা ভূমিতে চলাফেরা করতে পারে না। তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে কাকুতি মিনতি করে না বা ভিক্ষা চায় না, তাই অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে বলতে মসজিদের নবুবীতে অবস্থানরত গরীব সাহাবীদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে; তাদেরকে 'আছহাবে ছোফ্ফা' বলা হত, সুদ যে খায়, যে দেয় যে লেখে এবং যে সাক্ষী ও জিম্মাদার সকলই জাহান্নামী।
✅যারা নিজেদের সম্পদ দিনে ও রাতে ব্যয় করে প্রকাশ্যেও এবং গোপনেও, তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে নিজেদের সওয়াব পাবে এবং তাদের কোনও ভয় থাকবে না আর তারা কোনও দুঃখও পাবে না।
—আল বাকারা - ২৭৪
✅যারা সুদ খায়, কিয়ামতের দিন তারা সেই ব্যক্তির মত উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এটা এই জন্য হবে যে, তারা বলেছিল, ‘ব্যবসাও তো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির নিকট তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশের বাণী এসে গেছে, সে যদি সুদী কারবার হতে বিরত হয়, তবে অতীতে যা কিছু হয়েছে তা তারই। আর তার অভ্যন্তরীণ অবস্থার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যে ব্যক্তি পুনরায় সুদের কাজই করল, তো এরূপ লোক জাহান্নামী হবে। তারা তাতেই সর্বদা থাকবে।
—আল বাকারা - ২৭৫
✅আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
—আল বাকারা - ২৭৬
✅নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা কোনও দুঃখও পাবে না।
—আল বাকারা - ২৭৭
✅হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক, তবে সুদের যে অংশই কারও কাছে অবশিষ্ট রয়ে গেছে, তা ছেড়ে দাও।
—আল বাকারা - ২৭৮
✅সূরা আল বাকারার ২৭৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী, বর্বর যুগে ধনী আমর ছকফী বনী মুগীরা মখজুমীর সাথে সুদী কারবার করত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সুদ হারাম হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, তখন বনী আমর এই শর্তে চুক্তি করল যে, তাদের অতীত প্রাপ্য সুদ পূর্ব প্রথা অনুযায়ী আদায় করতে হবে। আর তাদের নিকট অন্যের প্রাপ্য সুদ মাফ হয়ে যাবে। অতঃপর তাঁরা বনী মুগীরা হতে তাদের অতীত প্রাপ্য সুদ আদায় করে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিল। তখন বনী মুগীরার লোকেরা উদ্বিগ্নতা সহকারে মক্কার শাসক এতাব ইবনে উছাইদের সমীপে এই মর্মে মমলা দায়ের করল যে, বড়োই অবিচারের বিষয়, সমগ্র মক্কা বাসী সুদী কর্জ হতে মুক্তি পেল কিন্তু আমরা এখনও এই আপদের বেড়াজালে আবদ্ধ রয়ে গেলাম। তখন তিনি ঘটনার পূর্ন বিবরণ লিখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পাঠালে এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি নাযিল হয়।
✅তবুও যদি তোমরা সুদ পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর তোমরা যদি সুদ থেকে তাওবা কর, তবে তোমাদের মূল পুঁজি তোমাদের প্রাপ্য। তোমরাও কারও প্রতি জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না।
—আল বাকারা - ২৭৯
No comments