পার্ট - ০২ || সূরা আল বাকারা
✅আলিফ-লাম-মীম
____আল বাকারা - ১
✅সূরা আল বাকারার ১ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায়, আলিফ লাম মীম সূরা আল বাকারার এক নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পবিত্র কোরআনের অনেক সূরার প্রথমে এরূপ বিচ্ছিন্ন অক্ষর আছে। এগুলোকে হরুফে মুকাত্তায়ত বলা হয়।
এ গুলোর অর্থ জানা অপ্রিহার্য নয়, এর প্রতি ইমানই যথেষ্ট । এগুলোর অর্থ ও রহস্য একমাত্র আল্লাহ্ পাকই ভাল জানেন।
—আল বাকারা - ১
✅কোরআন সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। ইহা পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের জন্যে।
—আল বাকারা - ২
✅যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায কায়েম করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে আমার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে।
—আল বাকারা - ৩
✅যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
—আল বাকারা - ৪
✅সূরা আল বাকারার ৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দৃষ্টির অন্তরালে যা কিছু রয়েছে, তা সবই গায়েব যেমনঃ আল্লাহ্, ফেরেশ্তা, বেহেশ্ত, দোযখ ইত্যাদি। এই গুলোই হচ্ছে অদেখা বিষয়, আর এই গুলোর উপরই বিশ্বাস এবং ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে।
✅যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ঈমান আনে, এরাই এমন লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সঠিক পথের উপর আছে এবং এরাই এমন লোক, যারা সফলতা লাভকারী।
—আল বাকারা - ৫
✅যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, তুমি তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর, তাদের পক্ষে উভয়ই সমান; তারা ঈমান আনবে না।
—আল বাকারা - ৬
✅যারা অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, ঈমান আনে না,
আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
—আল বাকারা - ৭
✅মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ তারা ঈমানদার নয়।
—আল বাকারা - ৮
✅সূরাঃ আল বাকারার ৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হযরত আলী (রাঃ) মুনাফেক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং মুনাফেকী পরিত্যাগ কর, অতএব মুসলমান আর অন্তরে কুফরী, এটা অত্যন্ত জঘন্য। উত্তরে সে বল্ল, হে আবুল হাসান আমাদের প্রতি আপনি এমন ধারনা পোষণ করবেন না, আমরা তো মুসলমান, আমরা তো আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস রাখি। তখন আল্লাহ্ তা'য়ালা তাদের প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে সূরা আল বাকারার এই আয়াত নাযিল করেন। - (বায়ানুল কোরআন)
—আল বাকারা - ৮
✅তারা আল্লাহ এবং মু’মিনগণকে ধোঁকা দিতে চায়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
—আল বাকারা - ৯
✅তাদের অন্তরে আছে ব্যাধি। যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং ঈমান আনে না, অতপর আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন এবং তাদের জন্যে আছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।
—আল বাকারা - ১০
✅যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং ঈমান আনে না, তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা অশান্তি সৃষ্টি কর না’, তখন তারা বলে, ‘আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী’।
—আল বাকারা - ১১
✅এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং ঈমান আনে না, কিন্তু এরা বুঝতে পারে না।
—আল বাকারা - ১২
✅যারা অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং ঈমান আনে না, যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি সেই রকম ঈমান আনব, যে রকম ঈমান এনেছে নির্বোধ লোকেরা? জেনে রেখ, এরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না।
—আল বাকারা
✅সূরাঃ আল বাকারার ১৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইহুদীরা নিজেদের প্রশংসা করে বলত যে, আমাদের অন্তঃকরনে পর্দা আছে, আমাদের দ্বীনের কথা ছাড়া অন্য কোন দ্বীনের কথা আমাদেরকে আকৃষ্ট করতে পারবে না। আল্লাহ্ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করে এদের ভ্রষ্টতার উপর লা'নত করেছেন। তাফসীরে ইবনে কাসীর
একদা মুনাফেক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), হজরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) প্রমুখের প্রশংসা সকলের সামনে পৃথক পৃথকভাবে করল। তারপর তারা যখন সেখান থেকে প্রস্থান করলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই আপন সাথীদেরকে বলল, দেখলে তো এদেরকে কেমন সন্তুষ্ট করে দিলাম। যেন সে বুজুর্গদের সহিত ঠাট্টাই করল। তখন সূরা আল বাকারার এই ১৩ নম্বর আয়াতটি নাযিল হয়। - লুবাবুন্ নুযূল
—আল বাকারা - ১৩
✅যারা অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং ঈমান আনে না, তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো মুসলমানদের সাথে তামাশা করি মাত্র।
—আল বাকারা - ১৪
✅যারা ঈমান আনে না, আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পরকালের জীবন আছে বলে মনে করে না, আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশানে থাকে।
—আল বাকারা - ১৫
✅যার ঈমান আনে না, আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পরকালের জীবন আছে বলে মনে করে না, এরাই তারা, যারা হিদায়াতের পরিবর্তে ভ্রান্তি ক্রয় করেছে। ফলে তাদের ব্যবসায়ে লাভ হয়নি এবং তারা সঠিক পথও পায়নি।
—আল বাকারা - ১৬
✅যাঁরা ঈমান আনে না, অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন সেই আগুন তার আশপাশ আলোকিত করে তুলল, তখন আল্লাহ তাদের আলো কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ঐ অবস্থায় ছেড়ে দিলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পায় না।
—আল বাকারা - ১৭
✅তারাই বধির, বোবা এবং অন্ধ। যারা ঈমান আনে না, আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পরকালের জীবন আছে বলে মনে করে না,
সুতরাং তারা আল্লাহর পথে ফিরে আসবে না।
—আল বাকারা - ১৮
✅মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত।
—আল বাকারা - ১৯
✅সূরাঃ আল বাকারার ১৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একদা মদীনার দুজন মুনাফেক পলায়ন রত অবস্থায় পথে বৃষ্টি বাদল, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎ চমকের মধ্যে পতিত হল, ঘোর অন্ধকার হয়ে গেল। তারা উভয়ে দাঁড়িয়ে গেল। বিদ্যুৎ চমকে উঠলে সে আলোতে দু এক পা করে চলত। আবার অন্ধকার হলে দাঁড়িয়ে থাকত। বজ্র ধ্বনির ভয়াভয়তায় মৃত্যু ভয়ে কানের ছিদ্রে আঙ্গুল গুঁজে দিত। শেষ পর্জন্ত হনভম্ব হয়ে বলতে লাগল, মেঘমুক্ত হলে আমরা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর দরবারে গিয়ে তার সত্যিকার গোলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর ভোরে উভয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ইসলামের আলোকে উদ্ভাসিত হল। এ আয়াতে তাদের উদাহরণ বর্ননা করা হয়েছে। - লুবানুন নুযূল
—আল বাকারা - ১৯
✅মনে হয় যেন বিজলী মুনাফিকদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেবে। যখনই বিজলী তাদের সামনে আলো দান করে তারা তাতে চলতে শুরু করে, আবার যখন তা তাদের উপর অন্ধকার বিস্তার করে, তারা দাঁড়িয়ে যায়। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
—আল বাকারা - ২০
✅হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
—আল বাকারা - ২১
✅২১ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযাহী, পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ্ তায়ালা মুসলমান। কাফের ও মুনাফেক এ তিন সম্প্রদায়ের অবস্থা বর্ননা করেন। এখন সাধারন ভাবে সকলকে সম্বোধন করে তাঁর ইবাদাতের আদেশ দিচ্ছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরআন মাজীদ " হে মানুষ!" বলে মক্কাবাসীদেরকে এবং "হে ইমানদারেরা!" বলে মদীনাবাসীদেরকে সম্বোধন করা হয়। এ পর্যন্ত যেন, এটাই বলা হল যে, কুরআন একমাত্র পূর্নাজ্ঞ জীবন বিধান এবং এটা দিয়ে কারা উপকৃত হবে, যেহেতু ইবাদাতের মূল ভিত্তি দুটি- তৌহীদ ও রিসালত সেহেতু প্রথমে তৌহীদের বর্ননা প্রদান করা হয়।
✅যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্যে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্যে ফলমূল উৎপাদন করেন। সুতরাং তোমরা জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় কর না।
—আল বাকারা - ২২
✅ কুরআন সম্পর্কে তোমাদের যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহে থাক, যা আমি আমার বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নাযিল করেছি, তবে তোমরা এর মত কোনও একটা সূরা বানিয়ে আন। আর সত্যবাদী হলে তোমরা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের সাহায্যকারীদের ডেকে আনে।
—আল বাকারা - ২৩
✅কুরআন সম্পর্কে তোমাদের যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাক, তবে তোমরা এর মত কোনও একটা সূরা বানিয়ে আন, এটা নিশ্চিত যে তোমরা তা কখনই পারবে না, তাহলে সেই দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
—আল বাকারা - ২৪
✅যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য এমন সব বাগান (প্রস্তুত) রয়েছে, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে। ২২ যখনই তাদেরকে তা থেকে রিযক হিসেবে কোনও ফল দেওয়া হবে, তারা বলবে, এটা তো সেটাই, যা আমাদেরকে আগেও দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে এমন রিযকই দেওয়া হবে, যা দেখতে একই রকমের হবে। ২৩ তাদের জন্য সেখানে থাকবে পুতঃপবিত্র স্ত্রী এবং তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে।
—আল বাকারা - ২৫
✅নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনও বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য কোনও রকমের উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না, তা মশা এর মত তুচ্ছ জিনিস হোক বা তারও উপরে অধিকতর তুচ্ছ হোক। তবে যারা মুমিন তারা জানে, এ উদাহরণ সত্য, যা তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত। কিন্তু যারা কাফির তারা বলে, এই তুচ্ছ উদাহরণ দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য কী? এভাবে আল্লাহ এ উদাহরণ দ্বারা বহু মানুষকে বিপথগামীতে লিপ্ত করেন এবং বহুজনকে হিদায়াত দান করেন। আর তিনি বিপথগামী করেন কেবল তাদেরকেই, যারা নাফরমান।
—আল বাকারা - ২৬
✅ওরাই বিপথগামী, যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে আর দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
—আল বাকারা - ২৭
✅তোমরা কিরূপে আল্লাহ্কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
—আল বাকারা - ২৮
✅আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি লক্ষ্য করেন এবং তাকে সাত আকাশরূপে সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ করেন। আর তিনি প্রত্যেক জিনিসের পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
—আল বাকারা - ২৯
✅সূরাঃ আল বাকারার ২৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি ও ফেরেশতাদের সংলাপ আল্লাহ্ তায়ালা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পর পৃথীবিতে জিনদেরকে এবং আসমানে ফেরেশতাদেরকে আবাদ করলেন। দীর্ঘকাল ধরে ভূ-পৃষ্ঠে জিন্দের বসবাস ছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে হিংসাদ্বেষ, শত্রুতা ও বিদ্রোহ বিরাজ করতে থাকে এবং বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালা এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের থেকে ভূ-পৃষ্ঠকে মুক্ত করার জন্য এক দল ফেরেশতা পাঠিয়েছেন এবং তাদের দলপতি ছিল ইবলীস। ইবলীস ফেরেশতাদের সাথে নিয়ে জমীনে আসল এবং দানবকুলকে আক্রমণ করে পর্বতমালা ও দ্বীপাঞ্চলে তাড়িয়ে দিল। এতে ইবলীসের মর্জাদা বৃদ্ধি পেল। ফলে সে আহংকার করতে লাগল। ফেরেশতারা যখন আদম সৃষ্টির কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁরা জিন জাতির উপর অনুমান করে, আর ইবনে আব্বাস ও ইবনে মাসউদের মতে, আল্লাহর সংবাদ অনুসারে বলতে লাগলেন, এমন মাখলুক সৃষ্টি করা সমীচীন নয় যারা ফাসাদ ও রক্তপাত করবে আমরাইত আপনার আদেশ পালনের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ তায়লা আদম সৃষ্টির রহস্য প্রকাশের জন্য আদম (আঃ)- কে অনেক কিছু শিক্ষা দিলেন।
✅আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে বললো, আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে চাই। তখন ফেরেশতাগণ বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে অশান্তি বিস্তার করবে, খুন-খারাবী করবে, অথচ আমরা আপনার তাসবীহ, হামদ ও পবিত্রতা ঘোষণায় নিয়োজিত আছি, আল্লাহ বললেন, আমি এমন সব বিষয় জানি, যা তোমরা জান না।
—আল বাকারা - ৩০
✅আল্লাহ আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর সে সমস্ত নাম ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, আদম তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও,
—আল বাকারা - ৩১
✅আদম আল্লাহকে বললো, আপনি মহান, আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই। প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মালিক তো কেবল আপনিই।
—আল বাকারা - ৩২
✅আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি তাদেরকে এসব জিনিসের নাম বলে দাও। সুতরাং যখন তিনি তাদেরকে সে সবের নাম বলে দিলেন, তখন আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রহস্য জানি এবং তোমরা যা-কিছু প্রকাশ কর এবং যা কিছু গোপন কর সেসব সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে?
—আল বাকারা - ৩৩
✅যখন আল্লাহ ফিরিশতাদের বললেন, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজ্দা করল, ইবলিশ নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল এবং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
—আল বাকারা - ৩৪
✅সূরাঃ আল বাকারার ৩৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইবলীস ফেরেশতা ছিল না, কিন্তু ফেরেশতাদের সাথে বসবাসের কারণে তাদের একজন হয়ে গেল। তাই আল্লাহর নির্দেশ তাঁর উপরও প্রযোজ্য ছিল।
✅আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে থাক এবং জান্নাতের মধ্যে থেকে যা ইচ্ছা যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণ ভরে খাও। কিন্তু ওই বৃক্ষের কাছে যেও না। অন্যথায় তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
—আল বাকারা - ৩৫
✅সূরাঃ আল বাকারার ৩৫ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অনেক তাফসীরকারীর মতে জান্নাতে আদম এবং হাওয়াকে যে গাছের কাছে আল্লাহ যেতে নিষেধ করেছিল ঐ গাছটি গম বা ধান গাছ ছিল।
✅শয়তান আদম ও হাওয়াকে সেখান থেকে টলিয়ে দিল এবং তাঁরা যে সুখের ভেতর ছিল তা থেকে আদম ও হাওয়াকে বের করে ছাড়ল। আল্লাহ আদম, তার স্ত্রী ও ইবলিসকে বললেন, এখন তোমরা সকলে এখান থেকে বের হয়ে যাও। তোমরা একে অন্যের শত্রু হবে। এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।
—আল বাকারা - ৩৬
✅সূরাঃ আল বাকারার ৩৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইবলীস প্রানপণ চেষ্টা করে প্রথমে হযরত হাওয়াকে এবং পরে আদম (আঃ)-কে ঐ বৃক্ষের ফল খাওয়ায়। ফলে তাঁরা আর বেহেশতে থাকতে পারেননি।
✅হযরত আদম তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তওবার কিছু শব্দ শিখে নিলেন, যা দ্বারা হযরত আদম (আঃ) তওবা করল। ফলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
—আল বাকারা - ৩৭
✅আল্লাহ হুকুম করলেন, তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সেই হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার কোন ভয় নেই।
—আল বাকারা - ৩৮
✅জীবনের কোন না কোন সময় আল্লাহর হেদায়েত তোমাদের নিকট পৌঁছাবে, তার পরে ও যারা কুফরীতে লিপ্ত থাকবে এবং আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করবে, তারাই জাহান্নামবাসী। তারা সেখানে সর্বদা থাকবে।
—আল বাকারা - ৩৯
✅হে বনী ইসরাঈলগণ! তোমরা আল্লাহর সেই নি‘আমত স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহর সাথে তোমাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। আর তোমরা অন্য কাউকে নয়; বরং কেবল আল্লাহকেই ভয় কর।
—আল বাকারা - ৪০
✅সূরা আল বাকারার ৪০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হজরত ইয়া'কূব (আঃ)-এর আর এক নাম ছিল ইসরাঈল, তাঁর বংশধররাই বনী ইসরাঈল। পরবর্তীকালে এরাই ইয়াহুদী নামে পরিচিত হয়।
No comments